কুমিল্লার দেবীদ্বারে আট বছর বয়সী এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তারই সৎ বাবার বিরুদ্ধে। ঘটনার পর স্থানীয়দের মাঝে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযুক্তের ভাড়া বাসায় হামলা, ভাঙচুর এবং মারধর করে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অভিযুক্তকে উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার দিকে দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের হেলাল কাজী বাড়ির একটি ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত মো. জামাল হোসেন (৫০), দাউদকান্দির গৌরীপুর চশুই পালপাড়ার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন অটোচালক। প্রায় এক মাস আগে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী জেসমিন আক্তার (২৮) ও তার আগের পক্ষের মেয়ে (৮) কে নিয়ে ভাড়া থাকতেন ওই বাড়িতে।
শিশুটি কুমিল্লা শহরের দারুল হাকিমিয়া আলিম মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। অভিযোগ রয়েছে, রাতে সুযোগ পেয়ে জামাল হোসেন তার সৎ কন্যার ওপর পাশবিক আচরণ করে এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এমনকি শিশুটির স্পর্শকাতর স্থানে কামড় দেয় সে। শিশুটির চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে পরিস্থিতি বুঝে ফেলেন।
প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি টাকা দিয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে, শনিবার (৫ এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তের বাসায় হামলা চালায় এবং তাকে মারধর করে।
এই সময় বাড়ির মালিক আব্দুর রশিদের ছেলে সাকিব হোসেনসহ আরও কয়েকজন হামলার শিকার হন। সাকিবকে গুরুতর অবস্থায় দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
খবর পেয়ে প্রথমে দেবীদ্বার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রায়হানুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে একটি দল অভিযুক্ত জামাল হোসেনকে জনতার রোষ থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত জামাল হোসেন এর আগে তার প্রথম স্ত্রী রেহানা আক্তারকে নিয়ে দেবীদ্বার বানিয়াপাড়ায় ভাড়া থাকতেন। বছরখানেক আগে রেহানাকে তালাক দিয়ে জেসমিনকে বিয়ে করেন তিনি। তবে মেয়ের ওপর যৌন নিপীড়নের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কোনো কথা বলেননি। তার স্ত্রী জেসমিন জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন, পরে মেয়ের মুখে সব জানতে পারেন।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, “বিকেলে পুলিশ অভিযুক্তকে আনতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে সন্ধ্যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনা সদস্যদের সঙ্গে অভিযানে অভিযুক্তকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়।”
শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত থানায় মামলা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছিল বলে জানা গেছে।
এই লোমহর্ষক ঘটনায় এলাকায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। স্থানীয়রা দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ