কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা প্রায় যুদ্ধের রূপ নিতে যাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র, যার ফলেই দুই দেশের মধ্যে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, তার মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এক বার্তায় লেখেন, “দীর্ঘ এক রাতের আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, ভারত ও পাকিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।”
তিনি দুই দেশের নেতাদের “শুভবুদ্ধি ও দায়িত্বশীলতার” জন্য প্রশংসা করেন।
শনিবার (১০ মে) সন্ধ্যায় পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জিও নিউজের খবরে বলা হয়, বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও পাকিস্তান সতর্ক বার্তা দিতে ভুল করেনি। ইসহাক দার বলেন, “পাকিস্তান সবসময় শান্তির পক্ষে ছিল এবং থাকবে। তবে ভবিষ্যতে ভারত যদি কোনো রকম আগ্রাসনের চেষ্টা করে, তবে পাকিস্তান কঠোর জবাব দিতে প্রস্তুত।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, দুই দেশ এখন একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তারিত আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে টানা আলোচনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারান। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটিই ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা। ভারত অভিযোগ করে যে, পাকিস্তান এই হামলায় পরোক্ষভাবে জড়িত।
পেহেলগাম হামলার জেরে ভারত একতরফাভাবে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাতিলের ঘোষণা দেয়। জবাবে পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিত করে এবং ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়।
যদিও আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, তবে পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি এবং সাম্প্রতিক উত্তপ্ত পদক্ষেপগুলোর প্রেক্ষিতে স্পষ্ট যে, উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি এখনো অনিশ্চিত।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ