সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটি বিশাল বিলাসবহুল বিমান উপহারের প্রস্তাব দিয়েছে কাতারের রাজপরিবার—এমনটাই জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ABC News। এতে বলা হয়, ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম আন্তর্জাতিক সফরের অংশ হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন।
তবে ৭৪৭-৮ মডেলের এই বিমানটি এখনই Air Force One হিসেবে ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। ট্রাম্পও মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার সময় এই বিমানটি ব্যবহার করছেন না বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিমানটি গ্রহণের আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিস্তারিত পরিদর্শনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প যখন অফিস ছাড়বেন, ঠিক তার আগেই এই বিমানটি তার ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে দান করার পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে বিষয়টি নিয়ে এখনো যথাযথ আইন পর্যালোচনার মধ্যেই রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কাতারের মিডিয়া অ্যাটাশে আলি আল-আনসারি CBS News-কে জানিয়েছেন, সাময়িকভাবে Air Force One হিসেবে ব্যবহারের জন্য বিমান হস্তান্তরের বিষয়টি দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে। তবে এটি এখনো আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকায়, কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এই সফরের সময় বিমানটি উপহার হিসেবে দেওয়ার খবরটি “ভুল”।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, “বিদেশি সরকার কর্তৃক দেওয়া যেকোনো উপহার প্রযোজ্য আইন মেনে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে গ্রহণ করা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন সর্বাত্মক স্বচ্ছতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান রিচি টরেস CBS News-কে জানিয়েছেন, তিনি এই উপহার গ্রহণের বিষয়ে তদন্ত চেয়ে Government Accountability Office (GAO)-কে চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, “৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিমানটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো বিদেশি সরকার কর্তৃক প্রেসিডেন্টকে দেওয়া সবচেয়ে মূল্যবান উপহার।”
তিনি আরও দাবি করেন, বিষয়টি অবিলম্বে নৈতিক পর্যালোচনার আওতায় আনা উচিত এবং এটি Emoluments Clause লঙ্ঘন করছে কিনা, তা তদন্ত করা জরুরি।
নিজের Truth Social প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প এই বিমান উপহারের ধারণাকে সমর্থন করে বলেন, এটি একটি “ফ্রি উপহার” এবং ৪০ বছরের পুরনো এয়ার ফোর্স ওয়ান-এর পরিবর্তে সাময়িকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত। তিনি আরও বলেন, “এটি খুবই প্রকাশ্য এবং স্বচ্ছ একটি লেনদেন। ক্রুকড ডেমোক্র্যাটদের এতটাই সমস্যা হচ্ছে যে তারা চায় আমরা এই বিমানের জন্য সর্বোচ্চ দাম দিয়ে দিই। কেউ চাইলেই তো সেটা করতে পারে! ডেমরা বিশ্বমানের হারা মানুষ! MAGA!”
প্রসঙ্গত, Air Force One প্রতিস্থাপনের কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। প্রথম নতুন বিমানটি ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালে। কিন্তু তা পিছিয়ে ২০২৭ সালে এবং দ্বিতীয়টির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৮ সাল—যেটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বছর হবে।
সোমবার ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। চার দিনের এই সফরে তিনি সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, এই সফরের মূল লক্ষ্য “আমাদের জাতিগুলোর মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করা।” তিনি আরও বলেন, “৮ বছর পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবার মধ্যপ্রাচ্যে আসছেন শান্তিপূর্ণ, সফল ও বাণিজ্য-সংস্কৃতিনির্ভর একটি অঞ্চলের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি পুনরায় উপস্থাপন করতে। যেখানে চরমপন্থার স্থানে সহযোগিতা ও সমৃদ্ধির জায়গা তৈরি হবে।”
বর্তমানে কাতারের প্রস্তাবিত এই বিলাসবহুল বিমান উপহারের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। নৈতিকতা, স্বচ্ছতা ও আইনি জটিলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। যদিও বিষয়টি এখনো প্রস্তাব ও পর্যালোচনার স্তরেই রয়েছে, ভবিষ্যতে এটি মার্কিন রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ